মোস্তাফিজুর রহমান তারা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা : দীর্ঘ ১৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাধীন খেয়ারচর জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুর হয়। পরবর্তিতে আরো ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নয় ছয় করে কাজটি সমাপ্ত দেখানো হয়। কাজটি ২০১০ সালে শুরু করে ২০১৫ সালে সমাপ্ত দেখালেও নদের দুইপার শকাত মজবুত করে নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়া রাবার ড্যাম সেচের অর্ন্তভ‚ক্ত কৃষি জমিতে সেচ সরবরাহের মজবুত কোন ক্যানেল বা ড্রেনেজ ব্যাবস্থা করা হয়নি। সব মিলে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহের কোন ব্যাবস্থা করা হয়নি। রাবার ড্যাম কতৃপক্ষের এমন অযতœ অবহেলার দৃশ্যে ওই অঞ্চলের কৃষকরা হতাশ। দীর্ঘ ৭ বছর আগে বাঁধ রাবার ড্যাম নির্মাণ হলেও ড্যামটি ব্যাবহার করা সম্ভব হয়নি কৃষকের কৃষির সেচ কাজে। ওই অঞ্চলের কৃষক জানতে চায় রাবার ড্যামটি কৃষির সেচ উপযোগী কবে করা হবে।
রাবার ড্যামটি যুগোপযোগী প্রকল্প। যার মাধ্যমে অল্প খরচে অতিসহজে হাজার হাজার একর জমিতে ইড়ি-বোরো চাষ করে কৃষির বিপ্লব ঘটানো যেতে পারে।
কিন্ত আজ অবহেলা, অযতেœ ওই বাঁধটি সেচ কাজে ব্যাবহার উপযোগী নাকরায় সরকারের উন্নয় মুখ থুবরে পড়েছে। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজলার লালকুড়া খেয়াঘাট হতে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার খানাখন্দে সংস্কার বিহীন পার রয়েছে । প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২ কিলোমিটার সিসি বøক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ মিটার সেতু। সেতুর দু’পাশের সিসি বøক করার কথা থাকলেও নদের পূর্ব সাইটটির কোন কাজ করা হয়নি। যারফলে বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় পাহাঢ়ী ঢলের তোরে ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বের দুইপার ভেঙ্গে কৃষি জমি ও বাড়িঘর ঝুকিতে পড়ছে।
রাবার ড্যাম অর্ন্তভ‚ক্ত এলাকার কৃষক আবু তালেব, শেখ ফরিদ , আমির উদ্দিনসহ অনেকেই অভিযাগ করে বলেন, প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বেশি দামে তেল কিনে ইড়ি-বোরো ধানের আবাদ করতে হচ্ছে। তাই সরেজমিন তদন্তপূর্বক চলতি ইড়ি-বোরো মৌসুমে রাবার ড্যামটি চালুর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
খেওয়ারচর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন রিপন বলেন, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় চারশ’ কৃষক সদস্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২শ’ কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো মিশিন, নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরও জানান, সমিতির সদস্যরা প্রকল্পটির কোন সুবিধা না পাওয়ায় রাবার ড্যাম এলাকার সমিতিটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালুর দাবি জানান ।
রৌমারী উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে ওই এলাকার আড়াই হাজার কৃষক পরিবারের ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। নদীতে মাছ চাষে লাভবান হবেন অনেক কৃষক। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে ডিজেল চালিত শ্যালো মিশিনের সংখ্যা কমে যাবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে।
উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েদ হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম এলাকার নদীর দু’পাশে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, তা না করায় প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ না হলে রাবার ফুলিয়ে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ৭ কিলামিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করলে এ প্রকল্পের সুফল পাবে কৃষকরা।
সেতুর দু’পাশের সিসি বøক ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই নদে ড্র্যাজারে মাঠি তুলায় সিসি বøকের ক্ষতি হয়েছে। নতুন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে বরাদ্দ আসলেই কাজ করা হবে। তিনি আরও বলেন ড্যামটির কাজ করা হয়েছে অনেক আগের কথা তখন আমি ছিলাম না ফলে আমি আসার পর এবিষয় নিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।