ব্রেকিং নিউজঃ

নেত্রকোণা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা চরম সংকটে

 

 

মোনায়েম খান, নেত্রকোণ : শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো প্রতিপাদ্য বিষয় থাকলেও, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মনিটরিং এরঁ অভাবে ও শিক্ষকদের অবহেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ঝিমিয়ে পড়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকরা সময় মতো স্কুলে আসেনা। ইচ্ছে মতো স্কুল বন্ধ করে চলে আসেন, দেখার কেউ নেই। বিভিন্ন দপ্তরে বারবার অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে দেখা দেয় অনিহা। অভিভাবকরা জানান সময় মত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে না আসায় ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সুদৃষ্টি না থাকায় ছাত্র সংকটে পড়েছে স্কুল গুলো। পৌরশহর ও উপজেলা সদরের আশপাশ ছাড়া গ্রাম গঞ্জের প্রতিটি স্কুলে কোন না কোন শিক্ষক থাকেন অনুপস্থিত। কোন কোন স্কুলে বহিরাগত ভাবে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষার্থীরা। সকালে স্কুল গুলোতে ছাত্রদের উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষকরা যান সময় পেরিয়ে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯ঘটিকায় ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকরা যান ১০ থেকে ১১টায়। বিকাল ৪.১৫ ঘটিকায় স্কুল বন্ধ করার কথা থাকলেও ৩টার সময় অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা গেছে গ্রাম গঞ্জের স্কুল শিক্ষকগণ বসবাস করেন জেলা শহরে, ফলে সময় মতো স্কুলে যেতে পারে না তারা। শিক্ষকদের অবহেলায় শিক্ষার্থীরা স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে প্রাইভেট মাদ্রাসায় । খবর নিয়ে জানা গেছে গরীব অসহায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ এনজিও । শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে গ্যারেজ ও বেকারিতে । জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে চার উপজেলার হিসাবের মধ্যে পূর্বধলা, আটপাড়া, কলমাকান্দা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলায় ২৮০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রে ২৮০ জন শিক্ষকের মাধ্যমে ৭৫৭২ জন ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো হচ্ছে। করোনার পর থেকে স্কুল গুলোর হিসাব অনুযায়ী প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। শিক্ষকদের অবহেলায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের জটিলতা। ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় দেখা দিয়েছে দূরত্ব। করোনা চলে গেলেও এখনোও মনে হয় স্কুল গুলোতে চলছে করোনার মতো দুরবস্থা। জেলার প্রায় শতাদিক স্কুল ঘুরে দেখা গেছে কোন কোন স্কুলে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্র নিয়ে ৬ জন শিক্ষক বসে আছেন। খাতা কলমে একশত থাকলেও বাস্তবে তা শূন্য। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে শুরু করে সকল স্তরে রয়েছে নানা জটিলতা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে শিক্ষা কর্মকর্তারা জিম্মি। শিক্ষক নেতারা রাজনীতি প্রভাব কাটিয়ে ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। যে কারনে শিক্ষকদের কারণ দর্শানো বা তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তাদের সৃষ্টি হয় ধর্মজাল। কর্মকর্তারা মাসের পর মাস অফিসে বসে থাকেন স্কুল গুলোর খবর নেন না। যে কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা জিমিয়ে পড়েছে। অনেকু স্কুলে নতুন বিল্ডিং রয়েছে যেখানে ক্ষুদ্র মেরামতের দরকার নেই। সেখানেও মেরামত করার টাকা দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ে। কাজের কাজ না করেই তারা বছরের পর বছর তুলে নিচ্ছে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা। যেখানে কাজের প্রয়োজন সেখানে কমিটির লোকজনকে নিয়ে লামসাম কাজ করে বাকি টাকা তুলে নিয়ে বাটোয়ারা করার অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়ে বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সন্ধ্যা রানী জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলার ১০টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে প্রাথমিক স্তরের রয়েছে নানা জটিলতা। স্কুল নিয়ে কমিটির লোকজনের মধ্যে রয়েছে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ। এর মধ্যে আটপাড়া উপজেলার বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আটপাড়া উপজেলা শিক্ষক নেতা নুরে আলম ঝিকু জানান স্কুলের বিল্ডিং এরঁ মেয়াদ উত্তিণ্য হওয়ায় ভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসেনা। কালিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্য মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে হাবিবুল্লা আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে ছাত্র সংকট নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছেন। দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের টাকা আতœাসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জমিদাতা সদস্য এডভোকেট মোঃ মুখলেছুর রহমান জেলা শিক্ষা অফিস সহ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। পূর্বধলা উপজেলার সালছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্রের বৃত্তির টাকা নিয়ে যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হোছেন আলীর মোবাইলে। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাথে এলাকাবাসীর সালিশ হয় কয়েকবার। ক্লাসের বিভিন্ন শ্রেণিতে বৃত্তির টাকা দিলেও রয়েছে নানা অনিয়ম। এর মধ্যে দেখা গেছে অনেক বিদ্যালয় গুলোতে এখনো রয়েছে সহকারি শিক্ষকদের সংকট। জেলায় তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যালয়ে এরঁ কোন খবর শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নী। খালিয়াজুরী উপজেলার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় আছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছরের পর বছর খবর নেওয়া হয়না বলে রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক কাঞ্চন মিয়া অভিযোগ করে বলেন শিক্ষকরা স্কুলে না গেলেও শিক্ষার্থীরা যায় প্রতিদিন স্কুলের এই অবস্থা দেখার কেউ নেই। জেলায় অন্তত ৩৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী জেলায় ১০টি উপজেলায় ১ হাজার ৩১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫২৭জন। স্কুলের খাতা কলমে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই । বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১ হাজার ৩১৩টি, অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৯৬১ জন প্রধান শিক্ষক। বাকি ৩৫২টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদের বেগ পেতে হয়। ভারপ্রাপ্তরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারেন না। খুঁজ নিয়ে দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট রয়েছে, বিপরীতে কোন কোন স্কুলে শিক্ষক আছেন তিন-চারজন। এই ভাবে দুরবস্থার মধ্যদিয়ে বিদ্যালয় গুলো চলছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ এমদাদুল হক মুকুল বলেন আপনি সত্য কথা বলছেন ছাত্র সংকটের বিষয়ে আমরা ”মা সমাবেশ করছি। এছাড়া যে সমস্ত শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না তাদের অভিভাকদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাথে কথা চলছে, তাদের আর আমাদের মধ্যে সময়টা আলাদা করা যায় কিনা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*