ব্রেকিং নিউজঃ

নিষেধাজ্ঞার ফলে বিপাকে পড়েছেন বাউফলের উপকূলীয় জেলেরা

বাউফল প্রতিনিধিঃ মা ইলিশ সংরক্ষণে বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে শুরু হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২দিন ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। এছাড়া মা ইলিশের ডিম ছাড়া নিরাপদ করতে নিষেধাজ্ঞার পুরো সময় জুড়ে জেলেদের সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান ও চাল সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর বাউফলে তেঁতুলিয়া নদী সংলগ্ন কয়েক হাজার জেলেরা। এবার এমনিতে তেমন একটা ইলিশ পাননি তারা। এর আগে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা মাছ ধরতে নামলে দু’দফায় বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েন। ফলে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পাল্লা ভারি হয়ে পড়েছে জেলেদের। ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া ২২দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার কয়েক হাজার জেলের একমাত্র জীবিকার পথ বন্ধ হলে খেয়ে না খেয়ে ধার-দেনা করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে তাদের। একটি পরিবারকে ২৫কেজি করে যে চাল দেওয়া হয় তাও অপ্রতুল। তেঁতুলিয়া সংলগ্ন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় নিবন্ধিত ইলিশের জেলে আছেন প্রায় সারে ৬ হাজার। আর অনিবন্ধিত আছেন আরও প্রায় ২হাজার জেলে।
এ সময় নিবন্ধিত জেলেরা পাবেন ২৫ কেজি করে চাল। আর এ চাল সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকবেন অনিবন্ধিত জেলেরা।
স্থানীয় জেলে জাকির গাজী বলেন, আমাদের ২২ দিন বসে থাকতে হবে। এ সময় আয় থাকবে না, ধার করেই চলতে হবে। তিন দফায় জাল-নৌকা নিয়ে নেমে কোন মাছ পাইনি, মাছও কম। আরেক জেলে হাসিফ মৃধা বলেন, অবরোধ শুরু হচ্ছে, এর আগে দুদফায় বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরতে পারিনি। এরপরও নদীতে নেমে মাছ পাইনি। ২৫ কেজি করে যে চাল দেওয়া হয় তাতে আমাদের কিছুই  হয় না। তাও আবার কেউ পায় আবার কেউ পায় না। জেলে ফুয়াদ ভূইয়া বলেন, ২২ দিনে আমাদের ক্ষতি হবে অনেক, খেয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এর আগে সামান্য যে মাছ পেয়েছি তাতে খরচও ওঠেনি। লোকসানে আছি। আর এখন মাছ পাওয়ার সময় ঠিক তখনই আবার অবরোধ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের ১২ মাসই ধাপে ধাপে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে ।
এরমধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৫দিন করে একমাসের অবৈধ জালের ব্যবহার নির্মূলে কম্বিং অপারেশন, ২০মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সামুদ্রিক  মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে অবরোধ, ১ নভেম্বর থেকে ৩০জুন পর্যন্ত ৮মাস ঝাটকা সংরক্ষণ অভিযান আর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চালানো হয়। এর পরও আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে উপকূলের জেলেদের দুঃখ দুর্দশার যেন শেষ নেই। তারা যেমনি পান না পর্যাপ্ত সহায়তা তেমনি নেই বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগও। এরপরও এ পেশায় খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছেন উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও তাদের পরিবার।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) মো. মাহাবুব আলম তালুকদার (ঝান্টা) বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। আর অক্টোবরে মা ইলিশ ডিম দিয়ে থাকে। তাই মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধির জন্য ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হচ্ছে। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*