মোনায়েম খান, নেত্রকোণা : নেত্রকোনা হাওরাঞ্চল প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে ধান, মাছ, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উজানের মেঘালয় পাহাড় থেকে পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসে পাহাড়ি বালি। আর এই পাহাড়ি বালিতে নষ্ট হচ্ছে একরের পর একর কৃষিজমি। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব এবং হুমকীতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে হাওরে। বছর বছর পাহাড়ি ঢল ও পাহাড়ি বালির আগ্রাসনের ফলে হাওরের সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ‘হাওর যুব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’ এর মাধ্যমে হাওর রক্ষায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠনের জোর দাবি জানিয়েছে হাওরবাসী যুবসমাজ। পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিত খনন ও বনবিনাশ থামানোর দাবিও জানান তারা। বৃহস্পতিবার জেলার কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের পাহাড়ি বালির আগ্রাসনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙা গ্রামে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এবং ৩৮টি যুব সংগঠনের জোট নেত্রকোণা সম্মিলিত যুব সমাজ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। দিনব্যাপি এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরবাসী কৃষক, মৎসীজীবী, আদিবাসী, যুবসহ নানা পেশাজীবী জনগণ তাদেও ক্ষয়ক্ষতি এবং দাবি তুলে ধরেন। হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় নানা শ্লোগান সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে পাহাড়ি বালিতে বিধ্বস্ত জমিতে দাঁড়িয়ে ‘প্রকৃতি-বন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হাওর, পাহাড় ও সমতলের বৈচিত্র্যময় কৃষিফসল, বিলুপ্তপ্রায় খাদ্য, জলবায়ু সহনশীল দেশী ধানের জাত প্রদর্শিত হয়। দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী এই সম্মেলনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল হাওরাঞ্চলের গান, নাটক, আদিবাসী নৃত্য ও ধামাইল নাচের ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। হাওরাঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মিলিতভাবে এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন। বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ি ঢল ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং এসব কারণে পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনও বেড়েছে। হাওরের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাওরবাসীকে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী ও উন্নত দেশের বিশ^নেতারা বৈশি^ক জলবায়ু তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করলেও বারবার এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করছেন। আসন্ন দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে এই তহবিল গঠন করতে হবে। হাওরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতিকে আমলে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বৈশি^ক জলবায়ু তহবিল হাওরাঞ্চলের জন্যও বরাদ্দ দিতে হবে। হাওর যুব জলবায়ু সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোণা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব বিপিন বিশ^াস, কলমাকান্দা উপজেলা যুব কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, ইউপি সদস্য রহিমা অক্তার, উপসহকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কৃষি কর্মকর্তা সৌহাদ্য দারিং, প্রথম আলো জেলা প্রতিনিধি পল্লব চক্রবর্ত্তী, কলমাকান্দা সরকারী কলেজের প্রভাষক রুপম সাহা, যুগান্তার উপজেলা প্রতিনিধি বিভাস সাহা, যুগান্তার জেলা প্রতিনিধি কামাল হোসেন, সমকাল জেলা প্রতিনিধি খলিলুর রহমান শেখ, নেত্রকোনা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান, সাংবাদিক লাবলু পাল, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, নৃবিজ্ঞানী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, বাঁধ রক্ষা কমিটির সভাপতি সুনীল ¤্রং, জলবায়ু ও নগর গবেষক জাহাঙ্গীর আলম, লেখক ও বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান, সমাজকর্মী শংকর, সংস্কৃতিকর্মী মো. আলমগীর, কৃষক মনোরমা আজিম প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য রাখেন নেত্রকোণা সম্মিলিত যুব সমাজের আহবায়ক পার্থপ্রতীম সরকার এবং যুব সংগঠক রনি খান আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। হাওরবাসীর দাবি তুলে ধরেন মদন যুব সংগঠনের সৈয়দ প্রিয়ম, চন্দ্রডিঙা যুব সংগঠনের জীবন হাজং, হাওর যুব সংগঠনের তামান্না বেগম, তৃষ্ণা মজুমদার, কৃষক মোতালেব মিয়া, কলমাকান্দা যুব সমন্বয়ক পলাশ মিয়া প্রমুখ। দিনব্যাপি সম্মেলনে হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় অবদানের জন্য চৌদ্দজনকে পরিবেশ সম্মাননা দেয়া হয়।