বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে অনেক ক্ষেত্রেই এসেছে পরিবর্তন। যান্ত্রিক যুগের দাপটে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামীণ জীবনের অনেক ঐতিহ্য। এমন একটি ঐতিহ্য হলো ঢেঁকি শিল্প। কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামীণ পরশে মিশে এ শিল্পটি। বলা যেতে পারে ঢেঁকি এখন স্বর্ণ।
অথচ এমন একদিন ছিল ঢেঁকি আর গ্রামবাংলা একসঙ্গে গাঁথা। ঢেঁকির ধপাস ধপাস শব্দে গ্রামগুলো হলো মুখরিত কাকে ডাকা ভোর থেকে গ্রাম্যবধূরা আরম্ভ করত ধান ভাঙানোর কাজ। ঢেঁকির ক্যারোর ক্যারোর শব্দেই ঘুম ভাঙত অনেকের। ঢেঁকির সেই আওয়াজ আর নেই তার জায়গায় এসেছে যন্ত্রচালিত ধান ভাঙার কল। ফলে ঢেঁকির কদর গেছে কমে। সুস্বাদ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ঢেঁকিছাঁটা চাল এখন দু®প্রাপ্য বস্তু। ঢেঁকিনির্ভর এক শ্রেণির লোক ছিল তারা ব্যবসা করত। অঞ্চলভেদে তাদের বলা হতো বাড়ানি বা কুটানি। তারাও চলে যাচ্ছে অন্যান্য পেশায়। দিনে দিনে ঢেঁকির কদর আর তেমন নেই। এমন একটি সময় ছিল গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছিল ঢেঁকির ঘর বা ঢেঁকি শ্যাল। ‘ও বৌ ধান ভাঙেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’নানান ছন্দে গান গায় হেলিয়া দুলিয়া’।
ঢেঁকি ঘরে এমন ছন্দ ও তাল ওঠে না। ঢেঁকিতে ধান ভাঙা ছাড়াও চিড়া, গুঁড়া মসল চালের আটা সবকিছুই ছিল ঢেঁকিনির্ভর এবং স্বাদই ছিল আলাদা। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে আমাদের গ্রামবাংলা থেকে ঢেঁকি যেন কালক্রমেই হারিয়ে গেছে। ঢেঁকির ব্যবহার স্থান করে নিয়েছে যন্ত্রচালিত ধান ভাঙার কল। এমনও দেখা যায় যে, ধান ভাঙার কল বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙার কাজ করছে। আর আমরা ক্রমেই ভুলে যাচ্ছি ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার ঢেঁকি শিল্পের কথা। গ্রাম্যবধূরাও এখন আর ঢেঁকিতে পা রাখতে চায় না। আমরাও আর পাচ্ছি না ঢেঁকিছাঁটা চাল তথা ভিটামিনসমৃদ্ধ চাল।
সরেজমিনে এখনও দেখা যায় গ্রাম এলাকায় দু-একটি স্থানে ঢেঁকি কিছু আটা কোটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে দেখা যাবে একেবার্ইে হারিয়ে গেছে ঢেঁকির অস্তিত্ব। নতুন প্রজন্মের হাস্যকর হয়ে পড়বে।