বিয়ে না করেও সন্তানের নামে ভাতা তুলছেন শিক্ষিকা

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় রুনা খাতুন নামের এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিয়ে না করেও সন্তানের নামে ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বয়স নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান রুনা খাতুন। একইসঙ্গে বিয়ে না করেও ভুয়া স্বামী ও সন্তান দেখিয়ে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শিক্ষা ভাতা তুলছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ২০১০ সালে বেসরকারিভাবে শুরু হয় আরাজি পিপুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। সে সময় বিদ্যালয়ে থাকা ৪ শিক্ষকও সরকারি নিয়োগ পান। এদের একজন সহকারী শিক্ষিকা রুনা খাতুন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুনা খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকলি গ্রামের বখত জামান ও রেনু বেগম দম্পতির মেয়ে। ২০১০ সালে সিরাজগঞ্জের আরিয়া মহন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৩.৬৯ পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি।

এসএসসি সনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৩ আগস্ট ১৯৯৫। অথচ বিদ্যালয় জাতীয়করণের সময় তিনি জন্মতারিখ ১৩ আগস্ট ১৯৯০ সাল ব্যবহার করে নিয়োগ নেন। এছাড়া তিনি অবিবাহিত হয়েও নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দেন। সন্তান না থেকেও ২০১৭ সাল থেকে সন্তানের নাম ব্যবহার করে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষা ভাতা তুলছেন।

চলতি বছর শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ফাউন্ডস ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন ভাতা দেওয়ার সময় তথ্য আপলোড করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ বিষয়ে গত ৪ জুলাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে এখানে কোনো স্কুল ছিল না। কোনো শিক্ষিত মানুষও ছিল না সে সময়। পরে আমরা ৪ জন শিক্ষক নিয়ে একটি স্কুল করি। প্রথমে রুনা আপা এখানকার বাসিন্দার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে চাকরি শুরু করেন। পরে তিনি সরকারি হন। কিন্তু তার বয়স কত ছিল সেটা তো আমরা জানবো না? এটা সরকারের বিষয় সরকার দেখবে।’

আরেক অভিভাবক বালা বেগম বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে এ স্কুলে রুনা আপা চাকরি করছেন। তিনি বিয়ে করেননি এবং তার কোনো সন্তানও নেই। কিন্তু অফিসে কী তথ্য দিয়েছেন, তা আমরা কীভাবে বলবো।’

অভিযুক্ত শিক্ষিকা রুনা খাতুন বলেন, ‘বয়স ঠিকঠাক করে শোকজের জবাব দিয়েছি।’ এছাড়া ভুয়া স্বামী ও সন্তান দেখিয়ে ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষা ভাতা তোলার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘স্কুলটি যখন বেসরকারি ছিল তখন আমরা একসঙ্গে ৪ শিক্ষক নিয়োগ পাই। পরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। কিন্তু সহকারী শিক্ষিকা রুনার জন্মসাল ভুয়া ছিল তা আমরা কাগজপত্র দেখে টের পাইনি। ইএফটি পূরণের সময় বিষয়টি সবার নজরে আসে। বর্তমানে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*