টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের টঙ্গীতে পাথর ছুঁড়ে ট্রেনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদের উপর্যুপরি পাথর নিক্ষেপ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় টঙ্গী রেলওয়ে আউটার সিগন্যাল তিস্তার গেট এলাকায়। জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯এর মাধ্যমে খবর পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা, জিআরপিসহ ৪টি আভিযানিক দল টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের ৯সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা হলেন-মেহেদী হাসান জয় (২৬), রনি (৩৫), রবিউল হাসান (৪০), স্বাধীন (৩০), সাইফুল ইসলাম জাকির (২৫), মাসুদ (২৭), মো. নাসির (২০), নয়ন হাসান (২৮) আশিক (২২)।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে পাথর ছুঁড়ে ১০-১২জনের একদল দুষ্কৃতিকারী ডাকাতির উদ্দেশ্যে হানা দেয়। এসময় ডাকাতদলের সদস্যরা যাত্রীর মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ট্রেনের বগিতে এলোপাথাড়ি পাথর নিক্ষেপ করে। পরে ডাকাতরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ট্রেনের যাত্রীদের নিকট থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন ও টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এসময় ডাকাতদের নিক্ষিপ্ত পাথর ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই ট্রেনের স্টুয়ার্ড (টিকিট চেকার) গৌতম চৌধুরীসহ অন্তত ১০জন আহত হন। পরে জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯এর মাধ্যমে খবর পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা ও জিআরপি ৪টি আভিযানিক দলে বিভক্ত হয়ে টঙ্গীর শিলমুন, মরকুন, তিস্তারগেট ও আমতলী কেরানীরটেক এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত মালামাল ও একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি চাপাতি, একটি ছুরি, দুইটি সুইচ গিয়ার ও একটি গুলতি উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে শুক্রবার দুপুরে কথা হয় ময়মনসিংহগামী ট্রেনের যাত্রী শামিম, ইব্রাহিম, ফাতেমা বেগম, খলিলুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা টঙ্গী থেকে প্রায়ই ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে যাতায়াত করেন। টঙ্গী তিস্তারগেট আউটার সিগন্যালে প্রায়ই ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিস্তারগেট এলাকার এক দোকানি যুগান্তরকে জানান, আউটার সিগন্যালের তিস্তার গেট এলাকায় বাড়িঘর না থাকায় জায়গাটি নিরব নি:স্তব্দ থাকে। তাই সিগল্যালে ট্রেন থামার সাথে সাথে ছিনতাইকারীরা যাত্রীদের মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার জানালা দিয়ে ছুঁ মেরে ছিনিয়ে নেয়।
এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক সদস্য আক্ষেপ করে জানান, তিস্তারগেট আউটার সিগল্যাল টঙ্গী রেলওয়ে জংশন থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে। আমাদের কাছে লাঠি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র নেই। কিন্তু ডাকাত ও ছিনতাইকারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডাকাতি এবং ছিনতাই করতে আসে। ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আমরা সশস্ত্র ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের প্রতিহত করতে পারি না। এছাড়াও আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে।
টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক ছোটন শর্মা বলেন, থানা পুলিশের সহায়তায় বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। এঘটনায় ট্রেনের স্টুয়ার্ড গৌতম চৌধুরী বাদী হয়ে কমলাপুর জিআরপি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ ) মাহাবুব উজ- জামান বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠাই। টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চার ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। পরে গ্রেফতারদের রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।