ভাগ‍্য বদলের স্বপ্ন থেকেই নদীতে খাঁচায় হানিফের মাছ চাষ

দাউদকান্দি (কুমিল্লা ) সংবাদদাতা : ড্রাম, বাঁশ, নেট, আর জিআই পাইপ দিয়ে তৈরী স্বপ্ন জালের বুননে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করে বেকারত্ব গুছিয়ে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির পদুয়া ইউনিয়নের সৈয়দখারকান্দি গ্রামের হানিফ তালুকদার। নদীতে ভাসমান মাছ চাষ তার জীবনে নিয়ে এসেছে স্বাবলম্বী হওয়ার নবদিগন্ত। হানিফ তালুকদারের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্পে নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে যুক্ত হচ্ছেন অন‍্য বেকার যুবকরা।

বেকার যুবকদের জীবনে আশার আলো – স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে আর্বিভূত হয়েছে দাউদকান্দি উপজেলা মৎস‍্য কর্মকর্তার কার্যালয়। বেকার যুবকদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার আতুঁরঘর হিসেবে কাজ করছে এই অফিসটি। মৎস‍্য অফিস নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ তৈরী করতে, কাজ করে বেকার যুবকদের মধ‍্যে।

হানিফ তালুকদার তাদেরই একজন নতুন পথের অগ্রপথিক। বিগত তিন বছর শ্রম মেধা ও অধ‍্যবসায়ের চর্চায় সফলতা অর্জন করেছেন নদীতে ভাসমান পদ্বতিতে মাছ চাষে।

মেঘনা,শীতলক্ষা ও ধনাগোদা নদীর ত্রি- মোহনা এবং মুন্সিগঞ্জ-চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলার প্রান্ত এলাকায় হানিফ তালুকদারের নদীতে ভাসমান পদ্বতির খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প।

এখানেই জল-মাটি আর প্রকৃতির অপরুপ এক মোহনীয় মায়ার মাঝেই তার জম্ম ও বেড়ে ওঠা। নদীর সাথে তার আজম্ম সখ‍্যতাই, তাকে নদীমুখী মাছ চাষে উদ‍্যোগী করে তুলেছে।

তিন মাস প্রশিক্ষনের পর হানিফ তালুকদারকে প্রথমে ১০টি খাঁচা সরবরাহ করে দাউদকান্দি উপজেলা মৎস‍্য কর্মকর্তার কার্যলয়। পরবর্তীতে দেয়া হয় আরো ১০টি খাঁচা। মাছ চাষে সফলতা দেখে হানিফ তালুকদার নিজ অর্থায়নে যোগ করেন আরো ২০টি খাঁচা। বর্তমানে তিনি ৪০টি খাঁচায় করছেন নদীতে ভাসমান পদ্বতিতে মাছ চাষ।

হানিফ তালুকদার এ প্রতিবেদকের কাছে শোনান তার সফলতার গল্প। বছরে তিনি দুইবারে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন। সামান‍্য পুঁজি দিয়েই শুরু করা সম্ভব এই ব‍্যবসা। এর জন‍্য প্রয়োজন হয় না নিজস্ব জলাশয়ের। নিজ বাড়ীর পাশে বহমান ধনাগোদা নদীতেই তিনি শুরু করেন খাঁচায় মাছ চাষ।

তিন বছর আগে মাত্র ১০টি খাঁচায় যে স্বপ্নযাত্রার শুরু তা আজ বর্ধিত হয়ে ৪০টি খাঁচা পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন প্রতিটি খাঁচা ১২ বাই ২২ ফুট। চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করেন মাছের রেনু পোনা। এরপর পাশ্ববর্তী পুকুরে করেন পরিচর্যা। পরিচর্যার পর ছাড়া হয় খাঁচায়। প্রতি খাঁচায় ৫ শত পোনা মাছ ৫ মাস পর উপযোগী হয় বিক্রির। তখন প্রতিটি মাছের ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৭ শত গ্রাম।

উপজেলা মৎস‍্য কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ প্রসঙ্গে বলেন,মানুষ যেন কর্মমুখী হয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারে,তাই আমরা আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব‍্যবস্থা গ্রহন করি। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের অনুদান দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, অনেকেরই নেই নিজস্ব পুকুর। তাই নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ করে একজন বেকার যুবক যেমন নিজে সমৃদ্ধ হবে, ঠিক তেমনি দেশেও মাছ উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগ,এককালীন খাঁচার অবকাঠমো নির্মান, এরপর থেকে রেনু পোনা,মৎস‍্য খাদ‍্য ও রক্ষনাবেক্ষন সাথে পরিশ্রমই নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে সফলতা নিয়ে আসে বলে জানালেন হানিফ তালুকদার।